বীর বাহাদুর বুধু ভগৎ

বীর বুধু ভগৎ

ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বুধু ভগৎ একজন অপরিচিত বিপ্লবী। তার লড়াই ছিল ব্রিটিশ, জমিদার ও মহাজনদের দ্বারা নিপীড়ন ও অবিচারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এই মহান বিপ্লবীর কথা কজনে বা জানে। দেশের জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে মৃত্যুবরণ করেন এই মহান বীর। তাহলে চলো শুনে নেওয়া যাক তার সমন্ধে কিছু কথা।

শোনা যায় যে তার কাছে দেবতাদের শক্তি ছিল। তার প্রতীক হিসাবে তিনি সর্বদা তাঁর সাথে একটি কুড়াল বহন করতেন। বীর বাহাদুর বুধু ভগৎ জন্মগ্রহণ করেন ১৭ই ফেব্রুয়ারি ১৭৯২ সালে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রাঁচি জেলার সিলগাই নামক একটি গ্রামে। সাধারণত ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহকে প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রাম বলে বিবেচিত করা হয়। এর আগেও অনেক বিদ্রোহ হয়েছিল, কিন্তু আমরা তা জানি না।

বীর বুধু ভগৎ শুধু বিপ্লবের সূচনা করেন নি, সাহস ও নেতৃত্বের দ্বারা তিনি ১৮৩২ সালে "লারকা বিদ্রোহ" নামে একটি ঐতিহাসিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসনকালে ছোট নাগপুরের উপজাতি অঞ্চলে ব্রিটিশ মহাজনদের অত্যাচার চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল। মুন্ডারা এরই মধ্যে জমিদার, মহাজনদের বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিদ্রোহ শুরু করেছিল। বুধু ভগৎ শৈশব থেকেই জমিদার ও ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর বর্বরতার সাক্ষী হয়ে আসছিলেন। 

বুধু ভগৎ দেখেছিল যে জমিদার কীভাবে বল প্রাপ্ত কেড়ে নিয়েছিল কৃষকদের তৈরি করা ফসল। দরিদ্র গ্রামবাসীরা বাড়িতে বেশ কয়েক দিন চুলা জ্বলতে পারেনি। বালক বুধু ভগৎ সিলগাইয়ের কোকিল নদীর তীরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতেন, আর ব্রিটিশ ও জমিদারদের কথা ভাবতেন, কি করে তাদের দেশ থেকে উচ্ছেদ করা যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একাই নির্জনে বসে তরোয়াল, তীর ধনুক এমনই চালাতেন যে, লোকেরা তাকে দেখে বলতেন বুধু ভগৎ দেবতাদের পাঠানো একজন দেবদূত। উজ্জ্বল যুবক বুধুর দুর্দান্ত কথা শুনে আদিবাসীরা তাঁকে তাদের ত্রাণকর্তা হিসাবে বিবেচনা করতে শুরু করে। বিদ্রোহের পক্ষে বুধুর তখন যথেষ্ট গুণ সমর্থন ছিল। তিনি অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছিলেন। কয়েক হাজার মানুষ তীর, ধনুক, তরোয়াল, কুড়াল নিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। 

ক্যাপ্টেন ইম্পের হাতে বন্দী কয়েকশ গ্রামবাসী, ব্রিটিশদের সাথে লড়াই করে মুক্তি পেয়েছিল। বুধু তাঁর দলকে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন । ঘন বন এবং দুর্গম পাহাড়ের সুযোগ নিয়ে তিনি ব্রিটিশ সেনাবাহিনীকে বেশ কয়েকবার পরাজিত করেছিলেন। বুধু ভগৎকে ধরতে ব্রিটিশ সরকার তখন এক হাজার টাকা নগদ পুরষ্কার ঘোষণা করেছিল।

কয়েক হাজার মানুষের সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে ব্রিটিশ সরকার এবং জমিদাররা কেঁপে উঠল। বুধু ভগৎকে বন্দী করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল ক্যাপ্টেন ইম্পকে। বেনারসের অশ্বারোহীদের একটি বিশাল দলকে বনে পাঠানো হয়েছিল। টিকু ও আশেপাশের গ্রাম থেকে কয়েক হাজার গ্রামবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বুধুর দলটি সেই গ্রামবাসী বন্দীদেরই মুক্তি দিয়েছে। তীব্র পরাজয়ে অভিভূত ক্যাপ্টেন।

১৮৩২ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি ক্যাপ্টেন ইম্প, বুধু এবং তার সঙ্গীদের সিলাগাই গ্রামে ঘিরে ফেলেছিলেন। বুধু আত্মসমর্পণ করতে চেয়েছিল যাতে অত্যাচারী ব্রিটিশদের গুলিতে নিরীহ গ্রামবাসীরা যাতে মারা না যায়। কিন্তু বুধুর ভক্তরা তাদের প্রদক্ষিণ করে ঘিরে ফেলে। সতর্কতার পরে ক্যাপ্টেন গুলি করার নির্দেশ দিলেন। নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে। বৃদ্ধা, শিশু, মহিলা এবং যুবকদের চিৎকারে অঞ্চলটি সেদিন কেপে উঠেছিল। রক্তাক্ত প্রায় ৩০০ জন গ্রামবাসী নিহত হয়েছিল। অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই গণ-বিদ্রোহকে অস্ত্রের জোরে নিরব করা হয়েছিল। বুধু ভগৎ এবং তাঁর পুত্র 'হালধর' এবং 'গিরধর' ব্রিটিশদের সাথে লড়াইয়ে মৃত্যুবরণ করেন। 



Post a Comment

0 Comments