দেশ যখন স্বাধীনতার সূর্য দেখতে যাচ্ছিল, তখন ভগৎ সিং এর কাকা মহান বিপ্লবী সর্দার অজিত সিং ৩৭ বছর পরে দেশে ফিরে এসে দেশভাগের কারণে দুঃখিত হয়ে ১৫ই অগাস্ট ১৯৪৭ সালে, তিনি চিরকালের জন্য চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন আর চোখের পাতা খোলেনি।
ভারতের সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন মহান বিপ্লবী ছিলেন। সর্দার অজিত সিং ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের শহীদ ভগৎ সিং-এর নিজের কাকা ছিলেন। সর্দার অজিত সিংয়ের জন্ম হয়েছিল ২৩শে ফেব্রুয়ারি ১৮৮১ সালে। তিনি ব্রিটিশ শাসনকে ভারত থেকে তাড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেন এবং ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে আলোচনা করেন। সর্দার অজিত সিং সামনা সামনি বিরোধিতা করেন, এর কারণে অজিত সিং কে রাজনৈতিক 'বিদ্রোহী' ঘোষণা করা হয়। যার কারনে তাকে জীবনের বেশির ভাগ সময় জেলে কাটাতে হয়। ১৯০৬ সালে লালা লাজপত রায়ের সাথে সর্দার অজিত সিংকেও দেশ ছাড়ার দণ্ড দেওয়া হয়। সর্দার অজিত সিং-এর সমন্ধে বাল গঙ্গাধর তিলক বলেছিল, স্বাধীন ভারতে অজিত সিং প্রথম রাষ্ট্রপতি হাওয়ার যোগ্য। ১৯০৯ সালে সর্দার অজিত সিং ঘর পরিবার ছেড়ে দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য বিদেশে যাত্রা শুরু করেন। সে সময় অজিত সিং-এর বয়স ছিল ২৮ বছর। ইরানের রাস্তা দিয়ে তুর্কি, জার্মানি, ব্রাজিল, ইতালি ও জাপান বিভিন্ন দেশে থেকে সর্দার অজিত সিং স্বাধীনতা সংগ্রামের বীজ তৈরি করেন এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের স্থাপনা করেন।
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, হিটলার আর মুসোলিনির সাথে যুক্ত হন। রোম রেডিওকে তিনি এক নতুন নাম দেয় 'আজাদ হিন্দ রেডিও', এই রেডিওর মাধ্যমেই তিনি বিপ্লবের প্রচার করতেন। ১৯৪৭ সালে অজিত সিং ভারতে ফিরে আসেন। সর্দারের স্ত্রীর নাম ছিল হরনাম কৌর। ৩৭ বছর নিজের ঘর সংসার ছেড়ে তিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য দেশ দেশান্তর ঘুরে বেড়াতেন। নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। ১৯৪৭ সালে আগস্ট মাসে ৩৭ বছর পর তিনি নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন, আসার পর তিনি খুবই দুঃখিত ছিলেন। কারন যে দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি ৩৭টি বছর কাটিয়ে দিলেন ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সূচনা করে, সেই দেশ আজ খণ্ডিত হতে চলেছে। ১৫ই আগস্ট ১৯৪৭ সালের ভোর রাতে ৪ টার সময় সর্দার অজিত বন্দেমাতরম বলে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দেশভাগের কারণে তার হৃদয় খণ্ডিত খণ্ডিত হয়ে গেছে, এর ফলে তিনি চিরকালের জন্য চোখ বন্ধ করে রেখেছিলেন আর চোখের পাতা খোলেনি।
লেখায়- প্রকাশ রায়
0 Comments