দিনটি ছিল ৫ই আগস্ট ১৯৪৩ সাল, আজাদ হিন্দ ফৌজ ও নৌ-বিদ্রোহের সেনাদের নিয়ে শুরু হলো কোর্ট মার্শাল। একই সঙ্গে ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয় কয়েকজন সেনা ও বাকিদের দেওয়া হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর যাদের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়, তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায়। আর বাকি সঙ্গীরা হলেন- কালীপদ আইচ, দুর্গাদাস রায়চৌধুরী , নন্দকুমার দে, নিরঞ্জন বড়ুয়া, নীরেন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়, সুনীলকুমার মুখোপাধ্যায়, ফণিভূষণ চক্রবর্তী, আবদুল রহমান, রবীন্দনাথ ঘোষ ও অনিলকুমার দে।
আজ এখানে আজাদ হিন্দ ফৌজ ও নৌ-বিদ্রোহের বীর শহীদ চিত্তরঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের কথা। তার জন্ম হয়েছিল অক্টোবর মাসের ১৯১৯ সালে। তিনি একসময় ব্রিটিশদের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বেশ কিছু সময় কেটে যাওয়ার পর যখন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় তখন সহকর্মী মানকুমার বসু ঠাকুরের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেন। এগিয়ে আসেন আরো দশজন বাঙালি তরুণ, যারা সকলেই পেশায় ছিলেন চতুর্থ মাদ্রাজ উপকূল রক্ষী বাহিনীর সেনা।
এই সেনাবাহিনীরা সকলেই ব্রিটিশ বাহিনীর আনুগত্যের শিক্ষা ভুলে গিয়ে জাতীয়তাবাদী ক্রিয়াকলাপে অংশগ্রহণ করেন। ফোর্থ মাদ্রাজ কোস্টাল ডিফেন্স ব্যাটারি ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে ১৯৪৩ সালের ১৮ই এপ্রিল সকলেই সামরিক পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন। বিচারে চিত্তরঞ্জন সহ অপর আট জনের মৃত্যুদণ্ড হয়।
তার পর এলো ২৭শে সেপ্টেম্বরে ১৯৪৪ সাল, চিত্তরঞ্জন সহ অপর আট জনকে গোপনে মাদ্রাজ পেনিটেনশিয়রিতে ফাঁসি কার্যকর করে ব্রিটিশ শাসক। মৃত্যুর আগে তারা হাসি মুখে একে অপরকে আলিঙ্গন করে বন্দে মাতরম্ ধ্বনি দিয়ে মৃত্যু বরণ করেন।
এরা সকলেই ছিলেন বাংলা মায়ের দামাল ছেলে, আজ বাঙালির হয়তো মনে নেই এদের। প্রণাম জানাই এই সকলকে। জয় হিন্দ, বন্দে মাতরম।
লেখায় - প্রকাশ রায়
0 Comments