ফাঁসির মঞ্চে সুশীলকুমার মুখার্জি (সুশীল মুখার্জি )


সুশীলকুমার মুখার্জি অনেকের কাছেই হয়তো জানা আছে, ১৯৪৩ সালে নৌ বিদ্রোহের ৯ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। সুশীলকুমার মুখার্জি সমন্ধে যতীন মুখার্জি ওরফে বাঘা যতীন এর ভাগ্নে হয়। আজও কি আমরা সুশীলকুমার এর সমন্ধে জানি, না জানি না। চলো জেনে নেওয়া যাক। সুশীলকুমার মুখার্জি ১৯২০ সালের ১৭ই আগস্ট জন্মগ্রহন করেছিলেন কলকাতার শোভাবাজারে তার মামার বাড়িতে। সুশীলকুমার এর প্রথম জিবন কেটেছিল খামারগাছির কামালপুর গ্রামে। কামালপুরে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হন। 

সুশীলকুমার মুখার্জি কালামপুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল থেকে উত্তীর্ণ হন এবং বালাগড় উচ্চ ইংলিশ স্কুলে ভর্তি হন। সুশীলকুমার মুখার্জি পরে ১৯৩৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় পাস করেন। পরবর্তী পড়াশোনার জন্য কলকাতার কলেজে ভর্তি হন। কিছুদিন পর তার পিতা পাঁচুগোপাল মুখার্জির মৃত্যু হয়। সুশীলকুমার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়, তারা ৯ জন ভাই বোন। তাদের খাবার ও সংসার চালাতে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। তারপর তিনি চাকরির জন্য বের হন। এদিকে বিশ্ব জুড়ে বিশ্বযুদ্ধের ডাক পড়ে গেছে। 

সুশীলকুমার মুখার্জি চাকরি পেয়ে গেলেন ভারতীয় উপকূল রক্ষা বাহিনী চতুর্থ হেভি ব্যাটারিতে, পেলেন গোলন্দাজ এর কাজ। সেই সময় বিশ্বযুদ্ধের ডাক শুনে ইংরেজরা সেনা ভর্তি নিতে শুরু করেছে তরুণদের। তারপর নিজের যোগ্যতায় হাবিলদারের পদ পেয়েছিলেন। ১৯৪২ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আজাদ হিন্দ ফৌজকে 'দিল্লি চলো' আব্বান জানান। আর অন্যদিকে 'ভারত ছাড়' আন্দোলনের ডাকে ভারতীয় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীদের মনে জাগ্রত সৃষ্টি হয়। এদিকে ইংরেজ সৈন্যরা যে সুযোগ সুবিধা পেতো, তা ভারতীয় সৈন্যরা পায় না। এভাবেই ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

সুশীলকুমার মুখার্জি ছিলেন এদের মধ্যে একজন। এবার ভারতীয় সৈন্যদের মধ্যে বিদ্রোহের দাবানল ছড়িয়ে পড়ে। এই দাবানলের নেতৃত্ব দেন সুশীলকুমার। সুশীলকুমার এর নেতৃত্বে ভারতীয় রক্ষা বাহিনীর গোলন্দাজরা সঞ্চিত গোলাবারুদ সমুদ্র ফেলে দেয়। দিনটি ছিল ১৯৪৩ সালের ১৮ই এপ্রিল, ইংরেজ সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ল তাদের ওপর। ধরা পড়েন ভারতীয় সৈন্যরা, মোট ১২ জন সৈনিককে গ্রেপ্তার করা হলো। শুরু হলো বিচারের প্রহসন। ৫ই জুলাই ১৯৪৩ সালে বিচারের রায় দেন। বিচারে ২ জনের দ্বীপান্তর হলো ও ১ জনের সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। বাকি ৯ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো।

সুশীলকুমার মুখার্জি সেই ৯ জনের মধ্যে একজন ও বাকিরা হলো মানকুমার বসু ঠাকুর, দুর্গাদাস রায়চৌধুরী, নন্দকুমার দে, চিত্তরঞ্জন মুখার্জি, নীরেন মুখার্জি, কালীপদ আইচ, ফণীভূষন চক্রবর্তী ও নিরঞ্জন বড়ুয়া। ২৭শে সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ সালে ফাঁসির মঞ্চে উঠে শ্লোগান দিতে লাগলেন বন্দে মাতরম, জয় হিন্দ। সাথে সাথেই দরির টানে শহীদ হলেন ভারতের ৯ তরুণ যুবক।


লেখায়::- প্রকাশ রায় 

Post a Comment

0 Comments